জলছায়া-পর্ব-৭।।ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।bangla golpo

 জলছায়া

ফায়াজ হাসান মাহি 



(৭)

আমি বললাম, তুমি কেমন ছিলে, এখন এই তুমিটা কেমন

আমি হয়তো বুঝিনা। কিন্তু আমি জানি তুমি অনেক

ভালো। তুমি আমার পরী, সাদা পরী। আমি খুব দ্রুত

তোমার কাছে এসে পড়বো দেখো। হয়তো

একদিন তোমার হোস্টেলে তোমার রুমের

পাশে এসে হাজির হয়ে যাবো। আমাকে সেদিন

রান্না করে খাওয়াবে তো? তোমার বিখ্যাত খিচূড়ি আর

ডিম?

নীতু হাসছে। আমি ওর হাসির শব্দে নদীর শান্ত

জলে মাছারাঙ্গা পাখির ডানার গল্প খুজতে থাকি।

পরের চার মাস খুব দ্রুত কেটে যায়। মোটামুটি টাকা

পয়সা, প্লেনের টিকেট সব গুছিয়ে ফেলেছি। শুধু

একটা জিনিস ঠিকমত হয়না। নীতুর সাথে আজকাল

কেমন যেন কথা হয়না। আমি ওকে ফোন দিলে ও

কথা বলে, কিন্তু আমি বুঝতে পারি ও কেমন যেন

বদলে গেছে। তারপর আবার মনে হয়, সব বাজে

ভাবনা। ওর হয়তো এক একা মন খারাপ। পরিবার থেকে

দূরে একা একা ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে পড়ে

থাকে। বয়সটাও তো বেশি না, যাকে ভালোবাসে

সবচেয়ে বেশি সেও হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশে

পড়ে রয়েছে। কিন্তু আর তো মাত্র কয়েকটা দিন।

আর দশদিন পর আমার ফ্লাইট। আজকে ঢাকাতে আমার

শেষ দিন। মেসে যা কিছু ছিলো সব গুছিয়ে

রেখেছি। রাতের হানিফ বাসে করে চলে যাবো

আমার প্রাণের শহর কুমিল্লায়, আমার বাড়ীতে। কতদিন

লালমাই যাইনা, চন্দ্রমুড়ায় পা রেখেছি প্রায় চার বছর

হয়ে গেছে। শালবন বিহারে আমার একটা নির্দিষ্ট

ভাঙ্গা টিলা আছে যেখানে আমার বসে থাকতে খুব

ভালো লাগে। কেন যেন মনে হতো এখানে

বিশাল বিশাল গুপ্তধন আছে। তিন গোয়েন্দার

“পাগলের গুপ্তধন” বইটা পড়ে কতবার ভেবেছি

এখানেও এমন কিছু গোপন স্থাপনা আছে যেটা

খুড়ে বের করলেই বিশাল একটা সিন্দুক বের হবে।

সেই সিন্দুক ভাংলে কি পাওয়া যাবে তা কখনো ভাবিনি।

সিন্দুক পেলেই আমি খুশি। এখন তো বড় হয়ে

গেছি, এসব ফ্যান্টাসী কাজ করেনা। ভালোবাসাটা

অবশ্য বেশ কাজ করে। দুদিন পর পশ্চিমে আঁধার

গড়বো, কিন্তু এই ভালোবাসাগুলো কি সেখানে

কখনো অনুভব করবো? নায়াগ্রা ফলস,

ডিজনীল্যান্ড, আইম্যাক্স থ্রিডি – কত কত বিনোদন।

আমি নিশ্চিত সেখানে আমি চন্ডীমুড়ার গম্বুজগুলো,

অথবা নজরুল ইন্সটিউটের বিদ্রোহী কবির

জ্বলজ্বলে চোখের ছবিটাই খুজে বেড়াবো।

ভার্সিটির এক বড় ভাই বলতো, বাংলাদেশের মাটির

গন্ধে বড় নেশা আছে। লাখ লাখ চুতিয়া নেতার পয়দা

দিয়েও এই নেশা কাটবেনা। আমি এখনো দেশ

ছাড়িনি। দেশ ছাড়লেও আমার আত্না আমাকে এই মাটির

নেশায় আটকে রাখবে, ছাড়বে না আমি জানি।

ভোরসকালে ছোটন আমার বাসায় আসলো।

আমাকে বললো, দোস্ত খুব ক্ষুধা লাগছে। নাস্তা

খাওয়া।

আমি নিচের হোটেলে ওকে পরোটা ভাজি

কিনে খাওয়ালাম। সে দাঁত খিলাল করতে করতে

বললো, দোস্ত একটা ঝামেলা হইছে। আমার

বউয়ের বাচ্চা হইছে আজকে। ভয়ে যাইতে

পারতেছিনা হাসপাতালে। এক সপ্তাহ ধইর্যাো ধান্দাবাজি

করতে একটু বরিশাল গেছিলাম। আজকে সকালে ওর

ফুপু ফোন কইর্যাক বলে বাচ্চা হইয়া গেছে।

হাসপাতালের বিল লাগবো। কিছু টাকা ধার দিবি?

আমি চিন্তা করলাম, আমার কাছে আমেরিকায় হাতখরচের

জন্য কিছু টাকা আব্বু দিয়েছিলো। সেখান থেকে

কিছু দিলে খুব সমস্যা হয়তো হবেনা। আমি কিছুক্ষণ

পর বললাম, দোস্ত আমি তো আমেরিকা চলে যাচ্ছি

২৯ তারিখ। কিছু টাকা আছে হাতখরচের জন্য। আমি

তোকে দিতে পারি পাঁচ হাজারের মত।

ছোটন শিস বাজিয়ে বললো, আলহামদুলিল্লাহ।

তাতেই চলবো। কিন্তু তুই আমেরিকা যায়া কি করবি? এই

দেশে বহুত ব্যবসা আছে। ভালো মত থাইকা পড়া

রাজার মত থাকতে পারবি। তুই যা টাকা আছে ওইগুলা দিয়ে

আমার সাথে বিজনেস কর।

আমি হাসিমুখে ওকে নিয়ে হোটেল থেকে

উঠে বাসায় গেলাম। ছোটন আমার মেসের বিছানায়

শুয়ে বললো তার সাথে যেয়ে যেন তার সদ্য

জন্মানো মেয়েটাকে দেখে একটা নাম দিয়ে

আসি। আমি রাজী হয়ে ওকে বললাম, দোস্ত আমার

নামের পছন্দ ভালো না। পুরানা আমলের নাম শুধু

মনে হয়। মনে কর, বকুল ফুলি জবা। এইসব নাম তোর

পছন্দ হবেনা।

(চলবে....)


জলছায়া -পর্ব-৬।ফায়াজ হাসান মাহি

জলছায়া-পর্ব-৫ ফায়াজ হাসান মাহি

জলছায়া-পর্ব-৪।ফায়াজ হাসান মাহি




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url