জলছায়া-পর্ব -৩ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo
জলছায়া-পর্ব -৩ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo
জলছায়া
ফায়াজ হাসান মাহি
(৩)
অফিস থেকে বের হয়ে মনে পড়লো আমার
জুতার মোজাটা ফুটো হয়ে গেছে। এক জোড়া
মোজা হাতে পায়ে ধরে হয়তো বিক্রেতার
থেকে ২৫ টাকায় কেনা যাবে। কিন্তু এই টাকাটা খরচ
করা সম্ভব না। ৫ দিন রাতে বন রুটি কেনা যাবেনা। আমি
শিস বাজাতে বাজাতে বাসে উঠলাম। বাস ভাড়া ৮ টাকা
লাগবে। এইজন্য রুটির সাথে ২ দিন চা খাওয়া বাদ দিতে
হবে। শুকনা রুটি অবশ্য স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
কোন কবি বলেছেন তা মনে নেই।
রাতের বেলা মেসের ছাদে উঠে ফোন দিলাম
নীতুকে। নীতু দুবার রিং হওয়ার পর ফোন ধরে
বললো, ঠান্ডা লাগছে। চা বানাচ্ছিলাম। চিনি কম দিয়ে
আজকাল চা খাই। ভালো লাগেনা একদম। তিতকুটে।
আমি হেসে বলি, আচ্ছা তোমার ক্লাস কেমন
হচ্ছে?
নীতু হেসে বলে, ক্লাস ভালো লাগেনা। আমার
ইচ্ছা করে স্ট্যানফোর্ডের পুরো ক্যাম্পাসটা
ঘুরে ঘুরে দেখি।আমার ভাইয়া এখন
স্ট্যানফোর্ডের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে
জয়েন করেছে, বায়ো ইনফরমেটিক্স
ডিপার্টমেন্টে। ভাইয়ার থেকে কত বছর ধরে
স্ট্যানফোর্ডের গল্প শুনেছি। এখন যখন নিজে
পড়ি কি যে একটা অদ্ভূত অনুভূতি হয় বোঝাতে
পারবোনা।তুমি কেন এখানে এপ্লাই করো না পিএইচডি
এর জন্য? তোমার তো রেজাল্ট ভালো।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, আমি হতদরিদ্র মানুষ
নীতু। চান্স পেলেও প্লেনের ভাড়া দিতে
পারবোনা।তবে তোমার জ্ঞাতার্থে জানাই, আমি
এইবছর চারটা ইউনিতে এপ্লাই করেছি ইউএসএ তে।
অসাধারণ সব মোটিভেশন লেটার লিখেছি। দেখি যদি
হয়, তাহলে আম্মুকে বলবো। হয়তো কিছু একটা
হবে।হয়তো না।
নীতু চুপ করে থাকে অনেকক্ষণ। তারপর বলে,
হাসিব একটা কথা বলি। তুমি কখনো কোন কিছু নিয়ে মন
খারাপ করবেনা। তুমি দরিদ্র এই কথাটাও আর বলবেনা।
জানো, আমেরিকাতে কত লোক রাস্তায় শুয়ে
থাকে। এরা কিন্তু টাকার অভাবে দরিদ্র না। এদের
কেউ নেই এইজন্য এরা দরিদ্র। এরা জীবনের আশা
ছেড়ে দিয়ে এখন রাস্তায় ঘুমায়, ড্রাগস নেয়,
নিজেকে একটু শান্তি দিতে যা ইচ্ছা করে বেড়ায়।
তোমার তো আমি আছি তাই না। গত তিনবছরে একবার
এমন হয়েছে আমি তোমার থেকে একটু দূরে
গেছি। যত কিছু হোক, আমি সবসময় তোমার সাথে
আছি। জানো তো?
আমার মাঝে মাঝে কাঁদতে ইচ্ছা করে। এই যেমন
এখন ইচ্ছা করছে। এই কান্নাটা আনন্দের। আনন্দটা হয়
যখন মনে হয় নীতুর মত একটা অসাধারণ মানুষ
আমাকে ভালোবাসে এটা ভেবে। মেয়েটা আমার
থেকে গুনে গুনে ৮ বছরের ছোট। কিন্তু যখন
কথা বলি মনে হয় ও আমার থেকে অনেক বড়।
পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিল সমস্যাটা আমার মত
প্রেমিকদের। এরা হাজার লক্ষবার চেষ্টা করলেও
বলতে পারেনা কাউকে কতটা ভালোবাসা যায়। আমিও
পারিনি।
নীতুকে আমি বলি, তোমার নামটা নীতু
রেখেছে কে?
নীতু হেসে বলে, তোমাকে আগেই বলেছি।
আমার ফুফু আমি হওয়ার পর আমাকে দেখে বাবাকে
বলেছিলো, আল্লাহ এই মেয়ের তো চোখ
অনেক বড়। নিশ্চিত ১০-১২টা প্রেম করবে। ফরিদ তুই
এর নাম নীতু রাখ। নীতু নামটা শুনেই ছেলেরা
সাবধান হয়ে যাবে। বুঝে যাবে, এ যেন তেন
মেয়ে নয়। এ হলো প্রেমকুমারী।
আমি হাসি। যতবার এই গল্পটা ওর কাছে শুনি ততবার হাসি।
নীতু তোমাকে হাজারটা জেগে থাকা রাতের
জ্যোৎস্না উপহার দিলাম। তুমি আমার কবিতা হয়ে
থেকো, সবচেয়ে প্রিয় কবিতা।
সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের ফোন পেয়ে।
আম্মু খুব রেগে আছে তিনদিন কথা বলিনা তাই। আমি
ইতুমিতু করে বললাম, আম্মু কয়েকদিন খুব ঝামেলায়
ছিলাম। কাল রাতে বাসায় এতো দেরী করে আসছি
তোমাকে এইজন্য আর বিরক্ত করিনাই। রাগ কইরোনা
প্লীজ।
আম্মু ঝাড়ি দিয়ে বললো, আমি একা একা কুমিল্লায়
পড়ে আছি। তোর বাবা সকালবেলা বের হয়ে শান্ডার
তেল বিক্রি করে, সারাদিন খবর থাকেনা। আজকাল তুইও
ভুলে গেছিস। মাশাল্লাহ আমি যে একটা মানুষ কারোও
কোন খেয়াল নাই।
আমার বাবা রিটায়ার্ড সরকারী দ্বিতীয় শ্রেণীর অতি
সৎ কর্মকর্তা। সে আজকাল কিছুটা হোমিওপ্যাথির
জ্ঞান অর্জন করেছে বিধায় বাসা থেকে ৫০০ মিটার
দূরত্বে একটা দোকান নিয়ে মানুষের রোগ বালাই
এর হোমিও চিকিৎসা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। মা
এটাকে রাগ করে শান্ডার তেল বলেছে। আমি
হাসিমুখে মা কে বলি, মা বাবাকে তার মত কাজ করতে
দাও। কে জানে হয়তো সে একদিন বিখ্যাত মানুষ
হয়ে যাবে, সবাই বলবে ওই দেখ ভাই হোমিও
চিকিৎসক ফারুক সাহেবের বউ আর ছেলে হেটে
যায়।
(চলবেgolp
o
