জলছায়া-পর্ব -২ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo

 






জলছায়া

ফায়াজ হাসান মাহি



(২)

ইন্টারভিউ রুমটা খুব ছোট্ট। আমি এখনো

রিসেপশনে বসে আছি, কিন্তু যখনই কেউ বের হয়

ভেতরে কি হচ্ছে কম বেশি বোঝা যায়। আমি

কয়েকবার উকি দিয়েছি। চোখে চশমা, ছাই রঙের

কোট গায়ে দেওয়া একটা লোক কলম নাচিয়ে

নাচিয়ে খুব ভাব নিয়ে প্রশ্ন করছে। ইন্টারভিউয়ের

আগে আমি কিছু মুখস্থ উত্তর তৈরী করে নিয়ে যাই।

আজকে কেন জানি, ভবিষ্যতে কি হতে চাচ্ছেন-

এই প্রশ্নটার আপডেট করা উত্তরটা মনে পড়ছেনা

ঠিকমত। রিসেপশনে রুমিলা নামে একটা রোগা

মেয়ে বসে আছে। আমার দিকে একটু পরপর

আড়চোখে তাকাচ্ছে। আমি যে তার তাকানোটা

বুঝতে পারছি এটা হয়তো সে বুঝতে পারছেনা।

একটা সময় সে তাকালে আমি স্পষ্ট ভাবে তার দিকে

তাকাই। অদ্ভূত ব্যাপার সে চোখ সরিয়ে নিচ্ছেনা।

আমি নিজেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চোখ সরিয়ে

নিলাম। আমার বন্ধু ফজলুর রহমান কমল, বর্তমান

মেসমেট আমাকে ইন্টারভিউতে আসার আগে

বারবার বলে দিয়েছে রিসেপশনে মেয়ে

থাকলে যেন ভাব করে আসি। তার মতে

রিসেপশনিস্ট ম্যাডামরা খুব পাওয়ারফুল হয়, এরা চাইলে

সহজেই আমার মত গরীব মেধাবীদের চাকরী

হয়ে যেতে পারে।এসব আজেবাজে কথা ভাবতে

ভাবতে মহিলা আমার নাম ধরে ডাকা শুরু করলো। আমি

কিছু উত্তর দেয়ার আগে বললো, আপনি হাসিব

জুবায়ের না?

আমি হাসিমুখে বললাম, জ্বী। ভেতরে যাবো?

মহিলা আমার দিকে না তাকিয়ে তার ডেস্কের

কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,

যাবেন না?

আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো

করে ইন্টারভিউ দিতে চলে গেলাম। ভেতরে

ঢুকে খেয়াল করলাম সবাই খুব গম্ভীর হয়ে বসে

আছে। আমি হাসিমুখে বললাম, ভালো আছেন?

ব্যাপারটা খুব উদ্ভট হয়েছে, সবাই একে অপরের

দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বুঝলাম আমার প্রথম বলা

দুই শব্দে আমি রিজেক্ট খেয়ে গেছি। ভয়ানক

ব্যাপার। চাকরী খুব জরুরী দরকার। টিউশনী মাত্র

এখন দুইটা করি। টাকার অভাবে মাসের শেষ আট দিন ৫২

টাকা নিয়ে ঘুরছি। আম্মুকে ফোন করার টাকাটাও নেই।

মেসের ভাড়া কোনভাবে হয়তো ম্যানেজ হয়,

আর কিছুই করা যায়না। বিপদে আছি আমি আইজুদ্দিন। আমি

কি আরো কিছু বলবো? এমন কিছু যাতে তারা আমার

গাধামী ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে একটা চাকরী

হাতে ধরিয়ে দেয়। কি বলা যায়?

বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার পর চশমা পড়া ভদ্রলোক

আমার দিকে না তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আমরা

তো ভালো নাই। দেশের অবস্থা গুরুতর। নতুন বাজার

খোলা যাচ্ছেনা, পুরনো ব্যবসাগুলো সব থমকে

আছে হরতাল ধর্মঘটের আড়ম্বরে। আমি বাংলার ছাত্র

ছিলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম

শ্রেণীতে দ্বিতীয়। বাংলা বই পড়েন নাকি হাসিব

সাহেব?

আমি হাসিমুখে বললাম, জ্বী। কাল পড়েছি কড়ি দিয়ে

কিনলাম। বিমল মিত্রের লেখা, খুব ভালো উপন্যাস

স্যার।

দ্বিতীয় ভদ্রলোক খুক খুক করে কাশি দিয়ে

হাতের কাছে রাখা পানির গ্লাসে এক চুমুক পানি

খেলো। আমি বুঝলা্ এই কাজটা সে ভাব দেখানোর

জন্য করেছে। আমিও তার ভাবে গলে গিয়ে তাঁকে

একটা অতিরিক্ত সালাম দিয়ে বললাম, স্যার...

উনি আমাকে বললেন, আপনার রেজাল্টতো

অনেক ভালো। দেশের বাহিরে চলে যাবেন না

তো আবার?

কবিতাঃbangla kobita 

Bangla golpo

আমি হাসিমুখে বললাম, আপাতত ইচ্ছা নাই। আপনাদের

প্রতিষ্ঠানের মত ভালো কোথাও চাকরী করতে

চাচ্ছি এখন। তাছাড়া আমার আর্থিক অবস্থা দেশের

বাহিরে যাওয়ার মত নয়।

মনে মনে নিজেকে নিজে সাবাশ দিলাম। চমৎকার

উত্তর হয়েছে। আমি নিশ্চিত সামনের তিন ফুলবাবু খুব

খুশি হয়েছে আমার উত্তরে। আমি পরের

প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। তিন নম্বর

ফুলবাবু এতোক্ষণ সব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল

করছিলো। সে এবার হাসিমুখে বললো, জুবায়ের

সাহেব আপনার মত এমন মুখস্থ উত্তর দিয়ে

অনেকেই আমাদের বোকা বানাতে চায়। আমরা

কিন্তু এতো বোকা না। আমিও আপনার বয়সে

অনেক ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়িয়েছি। এমন অনেক

গাজাখুরি গল্প করতাম। পরে চাকরী না পেয়ে ব্যবসা

শুরু করেছি। আপনারা তরুণ প্রজন্ম তো আবার মাস

শেষে বেতন ছাড়া চলতে পারেন না। ব্যবসা করার

সাহস আর ধৈর্য্য আপনাদের নাই। যাই হোক, আমরা

আপনাকে পরে জানাবো। কষ্ট করে আসার জন্য

অশেষ মেহেরবানী।

(চলবে.....)


জলছায়া পর্ব ১।bangla golpo jolchya episode 1




জলছায়া-পর্ব ১  ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url